Advertisement
																								 
											
                  	
                    বৃন্দাবনের বন তখন শরৎপূর্ণিমার আলোয় স্নিগ্ধ। যমুনার তীরে কদমফুলের সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে, বাতাসে বাজছে অদ্ভুত এক নীরব সুর। এই সুরের উৎস—শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি।তিনি তখন কৈশোরের পূর্ণতায়, প্রায় পনেরো-ষোলো বছর বয়সী— কিন্তু এই বয়স কেবল দেহের নয়, এটি প্রেমের প্রতীকী পরিপূর্ণতা। কৈশোর মানে প্রাণের উচ্ছ্বাস, সৌন্দর্য, এবং প্রেমের গভীরতা— তাই কৃষ্ণের কৈশোরকেই বেছে নেওয়া হলো ঈশ্বরীয় রসের প্রকাশের সময় হিসেবে।
কৃষ্ণের বাঁশি বাজল— যেমন বাজে এক চিরন্তন আহ্বান, যা সরাসরি ছুঁয়ে যায় আত্মাকে। বৃন্দাবনের গোপীরা, যারা কেউ মাখন মথছিল, কেউ সন্তানকে ঘুম পাড়াচ্ছিল, হঠাৎ যেন থেমে গেল। সব সংসারকাজ, কর্তব্য, ভয়—সব মুছে গেল সেই সুরের মধ্যে।
বাঁশির ডাক ছিল না কোনো দেহের আহ্বান— এ ছিল চেতনার ডাক, পরমপ্রেমের টান। তারা বুঝল, এই ডাক উপেক্ষা করা যায় না; এ ডাক এসেছে হৃদয়ের অন্তঃস্থ কৃষ্ণ থেকে।।তারা ছুটল বনপথে, চাঁদের আলোয়, মন উজাড় করে।
যখন গোপীরা পৌঁছল বৃন্দাবনের বনে, কৃষ্ণ তাঁদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।
তিনি বললেন—
“গোপীগণ, রাত গভীর, গ্রাম নিদ্রিত, তোমরা ঘরে যাও। এভাবে বাইরে থাকা শোভা পায় না।”
কিন্তু গোপীরা বলল—
“প্রভু, আপনি ছাড়া আমাদের ঘর কোথায়? আমাদের মন, প্রাণ, ভালোবাসা—সব তো আপনারই।”
এই সংলাপ বাহ্যিক নয়—এ এক আধ্যাত্মিক সংলাপ, যেখানে ঈশ্বর ভক্তের প্রেম পরীক্ষা করেন, আর ভক্ত আত্মসমর্পণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
কৃষ্ণ তাঁদের গ্রহণ করলেন, আর শুরু হলো সেই অদ্ভুত নৃত্য, যা যুগে যুগে “রাসলীলা” নামে পূজিত।
গোপীরা বৃত্তাকারে নাচছে, কৃষ্ণ তাঁদের মাঝখানে। কিন্তু যখনই কেউ চোখ মেলে দেখে— প্রত্যেকের পাশেই কৃষ্ণ! প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে একই ঈশ্বর উপস্থিত।
এই লীলা শেখায়—
ঈশ্বর এক, কিন্তু তিনি প্রত্যেক আত্মার সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রেমের সম্পর্কে যুক্ত।
চাঁদের আলোয়, ফুলের গন্ধে, যমুনার ঢেউয়ে সেই নৃত্য হয়ে ওঠে প্রেমের পরম রসানুভূতি।
আধ্যাত্মিকভাবে, রাসলীলা কোনো দেহের নৃত্য নয়— এ হলো আত্মার পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের প্রতীক। গোপীরা প্রতীক জীবাত্মার, কৃষ্ণ প্রতীক পরমাত্মার। তাঁদের নৃত্য মানে সেই চেতনার আন্দোলন, যেখানে আত্মা ঈশ্বরকে ঘিরে আবর্তিত হয়— যেমন গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘোরে। এই মিলন “কাম” নয়, এটি ভক্তি, যেখানে প্রেম নিঃস্বার্থ, অশরীরী, এবং মুক্তিদায়ক।
কৃষ্ণের বাঁশিটিও প্রতীকী। বাঁশের ভেতরের ফাঁক বা শূন্যতাই সুরের সৃষ্টি করে । তাই যে হৃদয় অহংকার ও কামনা থেকে শূন্য, সেই হৃদয়েই বাজে ঈশ্বরের সুর। ভক্তিতে তা পুর্ন হয়ে ওঠে । যে মন আত্মসমর্পণে ফাঁকা, সেই মনেই প্রতিধ্বনিত হয় কৃষ্ণের বাঁশির আহ্বান।
প্রতিবছর আমরা রাসলীলা দর্শন করি। রাসলীলা দর্শন মানে শুধু গল্প শোনা নয়— এ হলো অন্তরের অভিজ্ঞতা। যখন ভক্ত কৃষ্ণের প্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দেয়, তখন তার হৃদয়েই শুরু হয় সেই রাসনৃত্য।
ভক্তি মানে “আমি” মুছে “তুমি”-র উপস্থিতি অনুভব করা। এই অবস্থায় আনন্দ আসে—যে আনন্দ শরীরের নয়, আত্মার। এ আনন্দই রস, আর এই রসেরই নাম রাসলীলা।
শতাব্দী পরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই রাসভাবকেই ভক্তির সর্বোচ্চ অবস্থায় উন্নীত করেন। তিনি বললেন—
“কৃষ্ণপ্রেমই পরমধর্ম, আর রাসলীলা তার মহাভাব।”
চৈতন্যদেব নিজেই কৃষ্ণ ও রাধার মিলনভাব অনুভব করতেন নিজের হৃদয়ে। তাঁর দেহে ফুটে উঠত রসের প্রকাশ, যা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্মের মূলভিত্তি হয়।
তাঁর মতে, রাসলীলা মানে ভক্তির চরমতম অবস্থা— যেখানে আত্মা ঈশ্বরকে শুধু দেখে না, তাঁর সঙ্গে নাচে, কাঁদে, প্রেমে বিলীন হয়।
তাই রাসলীলা মানে ঈশ্বর ও আত্মার পরম মিলন। কৃষ্ণ হলেন প্রেমের কেন্দ্র, গোপীরা তার অনন্ত রশ্মি। নৃত্য মানে আত্মার চিরচঞ্চল আনন্দ, আর বাঁশি সেই আহ্বান যা সকল জীবকে ডাকে ঈশ্বরের পথে।
এ নৃত্য শরীরের নয়, হৃদয়ের; কাম নয়, করুণা; সংসার নয়, চেতনার মুক্তি।
যে মন এই লীলাকে বোঝে, সে আর বাইরে কৃষ্ণকে খোঁজে না— কারণ সে বুঝে যায়, বৃন্দাবন তো নিজের হৃদয়ের ভেতরেই আছে, আর কৃষ্ণ চিরকাল নাচছেন তারই অন্তরপদ্মে।
#রাস
                  			Advertisement
																								 
											
                  	
                    Event Venue & Nearby Stays
Kamalganj- Moulvibazar, kamalganj moulvibazar sylhet bangladesh,Maulvi Bazar, Sylhet, Bangladesh
									Concerts, fests, parties, meetups - all the happenings, one place. 
								
							




