আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শততম বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সহস্র সাধারণের সামনে প্রথম মঞ্চায়ন থেকে শুরু করে গত ৮৭টি প্রদর্শনীতে খনা দেশে-বিদেশে অসংখ্য দর্শকের অভিনন্দন ও শংসায় ঋদ্ধ হয়েছে।
নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন - "খনার ভেতর দিয়ে আমি সক্রেটিস থেকে নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর মত মহামানবদের উপস্থিতি উপলব্ধি করেছি"।
নাট্যজন আলি যাকের বলেন: "Khona, needless to say, is one of the finest plays that I have seen in years on the stages of Dhaka."
নাট্য নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ লিখেছেন: খনা "suggests that a feminine voice can never be appropriated, silenced, or muted because people remember – and people remember because Khanā's feminine voice is unique, sensitive to nature, close to the earth and hence generates life. Here lies the potent source of feminine agency."
নাট্য সমালোচক ড.বিপ্লব বালা লেখেন: "আখ্যানের বর্ণনাত্মক ভাষ্য - সব মিলে খনা নবআখ্যান ভাষ্যে তারিফযোগ্য বটে।"
নাট্য নির্দেশক মোহাম্মদ বারী বলেন: "কী স্পেসের ব্যবহার, কি চরিত্রগুলোর চলাফেরার ডিজাইন, সব ক্ষেত্রেই নির্দেশকের সচেতন নির্দেশনা টের পাওয়া যায়। বরাহ তাঁর ছেলেকে খনার জিহ্বা কাটার নির্দেশের পর দীর্ঘ নৈশব্দিক দ্যোতনা ব্যবহার করে যে নাট্য মুহূর্ত তৈরি করা হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ।"
সমালোচক রামেন্দ্র চৌধুরী লিখেছেন - "মঞ্চে খনার জিহ্বা কর্তনের অমানবিক দৃশ্য সৃষ্টির সস্তা প্রলোভন এড়ানোর পরিমিতি বোধেই নাট্যকার ও নির্দেশকের শিল্পচিন্তার গভীরতার প্রমাণ মেলে।"
সমালোচক কাজল রশিদ লেখেন: " বটতলার প্রযোজনা খনা আমাদের ভাবিয়েছে, সুখ-দুঃখের সাথী করেছে, জীবন-কর্ম-দর্শন থেকে শিক্ষার উপাদান উপকরণ যুগিয়েছে, যা যুগপৎভাবে আমাদের আনন্দিত ও ব্যথিত করেছে। যেকোন নাটকের সার্থকতা বুঝি এখানেই ।"
সমালোচক আবু সাইদ তুলু লেখেন: "বাঙ্গালী জীবনবোধ, ধ্রুপদ বিষয়বস্তু আশ্রয়, বর্ণনাত্বক অভিনয়রীতিতে, চিত্রল ও তারুণ্যদীপ্তভাবে খনা নাটকটি উপস্থাপনে প্রশংসার দাবি রাখে বটতলা। বটতলা যেভাবে দার্শনিক ভাষ্য বিশ্লেষণ, দৃশ্য ইমেজ , প্রাণবন্ততা, সুখদর্শন তৈরি করেছে তা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে।"
নাটক- সামিনা লুৎফা নিত্রা
নির্দেশনা- মোহাম্মাদ আলী হায়দার
মঞ্চ ও আলো - আবু দাউদ আশরাফী
সঙ্গীত- ব্রাত্য আমিন, শারমিন ইতি ও জিয়াউল আবেদিন রাখাল
বিশেষ কৃতজ্ঞতা - কৃষ্ণকলি ইসলাম ও জয়নুল আবেদিন
পোশাক- তাহমিনা সুলতানা মৌ ও তৌফিক হাসান
প্রপ্স- হুমায়রা আখতার
কোরিওগ্রাফি- নাসিরুদ্দিন নাদিম ও মোহাম্মাদ রাফী
নাটক কাহিনী
এক বিদুষী খনা যার অন্য নাম লীলাবতী।তার গল্পটা অনেক পুরনো, কিংবদন্তীর ঘেরাটোপে বন্দী। তবু যেটুকুর তল খুঁজে পাওয়া যায় তাতে বোধ হয় যে তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী।শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব সন্দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। পুরুষের এই ঈর্ষাটুকু বোঝা ততটা কঠিন নয়। কঠিন থাকেওনি। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহবা কর্তন ও তার খনা হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। তাই একবিংশ শতকেও হাতরে বেড়ানো খনার বচন। এ নাটকের কাহিনী এগিয়েছে চন্দ্রকেতু গড়কে কেন্দ্র করে,-যেখানে আজো আছে খনা-মিহিরের ঢিবি। লঙ্কাদ্বীপ থেকে খনা মিহিরকে সঙ্গে করে পৌঁছে দেন তার পিতা বরাহ মিহিরের কাছে। বরাহ মিহির বালহণ্ডার দেউলানগর বা দেউলনগরের রাজা ধর্মকেতুর রাজজ্যোতিষী। পুত্র মিহিরের জন্মকোষ্ঠী ভুল গণনা করে তাকে ভাসিয়েছিলেন বিদ্যাধরীর জলে। সেই মিহিরকে নিয়ে খনা হাজির হন বরাহের সামনে, ভুল প্রমান করেন বরাহের গণনা। ধর্মকেতুর রাজসভায় পরিচিত হন মিহির ও লীলাবতী। রাজসভাসদ পদও লাভ করেন। বরাহ মেনে নিতে পারেন না পুত্রবধুর এই উত্থান। অন্যদিকে খনা নতুন দেশের নতুন মানুষদের সাথে মেশেন বাধনহারা। প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ান শাসককুলের সামনে। লেখ্য ভাষাহীন প্রাকৃত বর্বরদের কৃষি সংক্রান্ত জ্ঞানকাণ্ডের বিকাশে গেঁথে চলেন বচনের পর বচন, যা বেঁচে আছে আজো কৃষকের মুখে। লীলার অবাধ্যতায় ক্রুদ্ধ বরাহ পুত্রকে আদেশ করেন খনার জিহ্বা কর্তন করে তাঁকে উৎসর্গ করতে।
খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূখণ্ডের বৃষ্টি জল হাওয়ার সাথে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিনয় নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সনে, সেই তার কাল। । পুরুষতন্ত্র না শ্রেণী কাঠামো, নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে? মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবন ত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার।খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য?নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্য এর পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তাঁর, সে নেশা কি এক রোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে করেন সম্মুখীন প্রশ্নের।
খনা'র এই প্রদর্শনীতে অভিনয় করবেন সামিনা লুৎফা নিত্রা , মোহাম্মাদ আলী হায়দার/ইমরান খান মুন্না, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, মিজানুর রহমান, আব্দুল কাদের, শেউতি শাহগুফতা, মাহবুব মাসুম, পঙ্কজ মজুমদার, কামারুজ্জামান সাঈদ, রানা তেওয়ারি, হাফিজা আক্তার ঝুমা, লোচন পলাশ, রিশাদুর রহমান রিশাদ, সানজানা ফারাহ, সানজিদা ইয়াসমীন, শাহনেওয়াজ ইফতি, আশরাফুল ইসলাম।
Event Venue & Nearby Stays
Experimental Theater Hall, Bangladesh Shilpokala Academy, 143/3 Segunbagicha,Dhaka, Bangladesh