Advertisement
আমরা যারা আশি বা নব্বইয়ের দশকে বেড়ে উঠেছি, তারা বিশেষ কিছু ছিলাম না, কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম।আমাদের সময়ে এক হাত লম্বা কলম পাওয়া যেত। আরেকটা কলম ছিল যার কালি চার রঙের, মাঝে মাঝে এর চারটা বোতাম একসাথে টেপার চেষ্টা করতাম। দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দেব বলে, আসতে দেরি করলে অধৈর্য হয়ে নিজেই বেরিয়ে আসতাম। রাতে হাঁটার সময় ভাবতাম আমি যেখানে যাচ্ছি চাঁদটাও আমার সাথে সাথে সেখানেই যাচ্ছে। কারেন্টের সুইচের দুই দিকে আঙুল চেপে ওটাকে অন অফ এর মাঝামাঝি অবস্থানে আনার চেষ্টা করতাম। স্কুলে যেতাম সবাই একসাথে দৌড়াদৌড়ি করে। ক্লাসে কলম খেলতাম, কাগজ কেটে চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলতাম। বন্ধুরা মিলে গাছ থেকে আম, জাম, লিচু চুরি করেছি কতবার!
আমরা যখন ছোট ছিলাম, দেয়াশলাইয়ের বাক্স দিয়ে টেলিফোন বানিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলতাম। আমরা নদীর চরে সাইকেলের টায়ার চালানোর পাল্লা লাগাতাম। তখন আমরা কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ বানিয়ে আকাশপথে পাড়ি দিতাম। কলাপাতা আর বাঁশের চাটাই দিয়ে দোকান বানিয়ে মিছেমিছি কেনাবেচা খেলতাম। বৃষ্টি এলে কচুপাতার ছাতা মাথায় দিয়ে কত যে ঘুরে বেড়িয়েছি!
আমরা সুপারির খোলা বা সাইকেলের বিয়ারিং দিয়ে গাড়ি বানিয়ে চড়তাম। দুপুরে সবাই মিলে একসাথে হৈ হৈ করে নদীতে ঝাঁপিয়ে গোসল করতাম। রাতে বাঁশ বাগানে গিয়ে জোনাকি পোকা ধরে ধরে পেঁপের ডগার ভিতরে ভরতাম। হাত জামার ভিতর ঢুকিয়ে খালি হাতা দেখিয়ে বলতাম "আমার হাত নাই"। মেলায় থেকে টিনের লঞ্চ কিনে পুকুরে ভাসিয়ে চালাতাম। গাছের ডাল দিয়ে গুলতি আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বন্দুক বানিয়েছি কত!
আমরা টিফিন খেতাম ভাগাভাগি করে। মাঝে মাঝে কারো টিফিন চুরি হয়ে যেত। আট আনা দিয়ে নারকেল আইসক্রিম খেতে না পারলে মনটাই খারাপ হয়ে যেত। হঠাৎ আকাশ দিয়ে প্লেন গেলে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। স্কুল ছুটি হলে দৌড়ে বাসায় আসতাম মিনা কার্টুন বা টম এন্ড জেরি দেখব বলে। ছুটির দিন দুপুরে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়তাম। টেলিভিশনে ছবি ভালো করার জন্য অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে কত কসরতই না করেছি! সন্ধ্যার পর আলিফ লায়লা, সিন্দবাদ, রবিনহুড, ম্যাকাইভার, মি. বিন দেখার জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম। ফলের বিচি খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম পেটের ভিতরে আবার গাছ না গজায়! মাথায় মাথায় ধাক্কা লাগলে শিং গজানোর ভয়ে ইচ্ছা করে আরেকটা ধাক্কা দিতাম। কেউ বসে থাকলে তার মাথার উপর দিয়ে লাফ দিতাম যাতে সে আর লম্বা হতে না পারে।
বিকেলে কুতকুত, কানামাছি, গোল্লাছুট, বউচি, লুকোচুরি, কপাল টোকাটুকি না খেললে আমাদের দিনটাই যেন মাটি হয়ে যেত! কাগজের নৌকা বানিয়ে খালে বিলে ভাসিয়ে দিতাম। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে পড়াশুনার বালাই থাকত না, তখন কি যে মজা লাগত বলার বাইরে। মামাবাড়ি যাওয়ার কয়েকদিন আগে দিয়ে অন্য রকম উত্তেজনা! ডিসেম্বর মাস আর শীতকালটা আমাদের সময়ে অনেক কালারফুল ছিল, তবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ যতই এগিয়ে আসত মনের মধ্যে ভয় ততই বাড়ত, ওই দিন যে ফাইনালের রেজাল্ট দিবে!
আমি জানি আমাদের জেনারেশনের যারা এই লেখা পড়ছে, নিশ্চয়ই তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এসব কথা মনে পড়লে ইচ্ছা করে আবার সেই ছেলেবেলাটা ফিরে পেতে! সত্যিই ওই দিনগুলো খুব মিস করি।
Wwcs97
Advertisement
Event Venue & Nearby Stays
Karihata, kapasia, Gazipur, Dhaka, Dhaka Division, Bangladesh